বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৬ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

Ad
x

আইডিআরএ অনুমোদন দিলে দিবে, না দিলে নাই : যমুনা লাইফ ভারপ্রাপ্ত সিইও

এস জেড ইসলাম   |   সোমবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২০   |   প্রিন্ট   |   1910 বার পঠিত

আইডিআরএ অনুমোদন দিলে দিবে, না দিলে নাই : যমুনা লাইফ ভারপ্রাপ্ত সিইও

‘বোর্ড আমাকে পারমানেন্ট হিসেবে (সিইও ক্ষেত্রে) বিবেচনা করেছে, এখন আইডিআরএ অনুমোদন দিলে দিবে না দিলে নাই’- নিজের বিষয়ে এমনই মন্তব্য করেছেন যমুনা লাইফ ইন্স্যুরেন্সের ভারপ্রাপ্ত সিইও কামরুল হাসান খন্দকার। সিইও’র পূর্ণাঙ্গ দায়িত্ব পেতে বীমা নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষের নিকট আবেদন করা এ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে। এসব বিষয়ে তার বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি প্রতিবেদকের কাছে এ মন্তব্য করেন।

জানা গেছে, যমুনা লাইফ ইন্স্যুরেন্সের সাবেক সিইও বিশ্বজিৎ কুমার মন্ডলের সিইও চুক্তির মেয়াদ গত ৭ এপ্রিল শেষ হয়। তাৎক্ষণিকভাবে সিইও নিয়োগ দিতে অপরাগ হওয়ায় কোম্পানির চিফ মার্কেটিং অফিসারকে ভারপ্রাপ্ত সিইও হিসেবে দায়িত্ব দেয় যমুনা লাইফের পরিচালনা পর্ষদ। এক্ষেত্রে বীমা আইন-২০১০-এর ৮০ ধারার ৪ উপধারা অনুযায়ী পূর্ণাঙ্গ সিইও না থাকলে ভারপ্রাপ্ত সিইও তিন মাস সে দায়িত্ব পালন করতে পারেন। তবে অপরিহার্য পরিস্থিতিতে এ মেয়াদ আরো তিন মাস পর্যন্ত বাড়ানোর সুযোগ থাকে। সেক্ষেত্রে আইডিআরএ’র অনুমতি নিতে হয়।

কিন্তু নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে অবহিত না করেই কামরুল হাসানকে এ দায়িত্ব অর্পণ করে যমুনা লাইফের পরিচালনা পর্ষদ। আবার তিন মাস অতিক্রান্ত হয়ে ‘অপরিহার্য পরিস্থিতি’ সুযোগে পরবর্তী তিন মাসের জন্য দায়িত্ব পালন করতে থাকেন। অথচ এক্ষেত্রে আইডিআরএ’র সুস্পষ্ট নির্দেশনা থাকতে হয়। ইতোমধ্যে সে মেয়াদও উত্তীর্ণ হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত পূর্ণাঙ্গ সিইও নিয়োগ দিতে না পারায় বীমা আইনের ৮০ ধারার ৫ উপধারা অনুযায়ী কোম্পানিতে প্রশাসক নিয়োগ দিতে পারে আইডিআরএ। এমন পরিস্থিতি আঁচ করতে পেরে গত ১৩ সেপ্টেম্বর করোনাকে দায়ী করে আইডিআরএ’র কাছে দুঃখ প্রকাশ করে চিঠি পাঠায় কোম্পানির চেয়ারম্যান বদরুল আলম খান। পাশাপাশি কামরুল হাসানকে পূর্ণাঙ্গ সিইও করতে আবেদন জানিয়ে কোম্পানিতে প্রশাসক নিয়োগের প্রয়োজনীয়তা নেই বলেও উল্লেখ করেন। তবে কামরুল হাসানের সাথে কথা বললে তিনি জানান, যথাযথ নিয়ম মেনেই তিনি যমুনা লাইফে দায়িত্ব পালন করছেন। এক্ষেত্রে চেয়ারম্যান ও ভারপ্রাপ্ত সিইও বিপরীতমুখী বক্তব্যেও ধোঁয়াশার সৃষ্টি হয়েছে।

এদিকে মুখ্য নির্বাহী হতে আবেদন করা কামরুল ইসলামের বিরুদ্ধে সাবেক কোম্পানি থেকে ঋণ নিয়ে পরিশোধ না করা ও এর দায়ে মামলার আসামি হওয়া, শিক্ষাগত যোগ্যতার শর্ত পূরণ না করা, মুখ্য নির্বাহীর অব্যবহিত পদে অন্যূন ৩ বছর দায়িত্ব পালন না করা ও ব্যবসায়ে অদক্ষতাসহ বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে। তবে সিইওর অনুমোদন পেতে ঋণ পরিশোধে ব্যর্থতা ও মামলার আসামি হওয়া এবং আইডিআরএ নির্ধারিত শর্তপূরণে ব্যর্থতাকেই তার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অযোগ্যতা হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।

একটি বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়, মেঘনা লাইফ ইন্স্যুরেন্সে চাকরিরত অবস্থায় ২০১৫ সালের ফেব্রæয়ারি মাসে রাজধানীর টিকাটুলি এলাকার কেএম দাস লেনে ফ্ল্যাট কিনতে প্রতিষ্ঠান থেকে ৩৭ লাখ টাকা ঋণ নেন। কিন্তু নির্ধারিত সময় পেরিয়ে এমনকি এখন পর্যন্ত সেই ঋণের টাকা শোধ করেননি। ফলে ২০১৭ সালের ৮ ফেব্রæয়ারি তার বিরুদ্ধে ঢাকা পঞ্চম যুগ্ম জেলা জজ আদালতে মামলা (নং: মানি সু-৯/২০১৭) দায়ের করে মেঘনা লাইফ ইন্স্যুরেন্স কর্তৃপক্ষ, যা এখনো চলমান। এক্ষেত্রে মুখ্য নির্বাহী নিয়োগ ও অপসারণ বিধিমালা-২০১২-এর ৫(ঘ) অনুযায়ী প্রার্থীর অযোগ্যতা হলো- ‘তিনি কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান কর্তৃক ঋণখেলাপি হিসেবে ঘোষিত হন’।

তাছাড়া সিইওর অনুমোদন পেতে আইডিআরএর নির্ধারিত শর্তপূরণে ব্যর্থতার মধ্যে রয়েছে শিক্ষাগত যোগ্যতার শর্ত পূরণ না করা ও মুখ্য নির্বাহীর অব্যবহিত পদে অন্যূন তিন বছর দায়িত্ব পালন না করা। এক্ষেত্রে জানা যায়, সিইও অনুমোদন পেতে মুখ্য নির্বাহী নিয়োগ ও অপসারণ বিধিমালা-২০১২-এর ৩(ক) অনুযায়ী কোনো স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয় হতে তিন বছর মেয়াদি স্নাতক ও এক বছর মেয়াদি স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অথবা চার বছর মেয়াদি স্নাতক বা সমমান ডিগ্রি থাকতে হবে। কিন্তু কামরুল হাসানের শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ অনুসারে ১৯৮৮ সালে চট্টগ্রাম হাজী মোহাম্মদ মোহসিন কলেজ থেকে দু’বছর মেয়াদি ব্যাচেলর অব কমার্স (বি.কম) পাস করেন। আর বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স একাডেমি থেকে এবিআইএ (পার্ট-১) সম্পন্ন করেছেন ২০০১ সালের নভেম্বরে। এরপর ভারতের ডিমড ইউনিভার্সিটি অব লক্ষেèৗ থেকে (২০০২ সালে) এক বছর মেয়াদি অ্যাক্সিকিউটিভ এমবিএ করেন। তাছাড়া বিদেশি এই ডিগ্রির মান ও গ্রহণযোগ্যতা নিয়েও স্বচ্ছ কিছু জানাতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন। ফলে তার গ্র্যাজুয়েশন ও তদূর্ধ্ব ডিগ্রির শিক্ষাকাল সাকুল্যে তিন বছর।

আবার মুখ্য নির্বাহীর অব্যবহিত পদে তিন বছর কাজ করার শর্তও পূরণ করতে পারেননি তিনি। জানা গেছে, যমুনা লাইফে যোগদানের আগে সানফ্লাওয়ার লাইফ, প্রাইম ইসলামী লাইফ ও গোল্ডেন লাইফ ইন্স্যুরেন্স, মেঘনা লাইফ ইন্স্যুরেন্স ও ন্যাশনাল লাইফ ইন্স্যুরেন্সে চাকরি করেন কামরুল হাসান খন্দকার। এসব কোম্পানিতে নিয়োগ ও অব্যহতিপত্র অনুযায়ী, মুখ্য নির্বাহীর অব্যবহিত নিম্ন পদে ৯ মাস ২২ দিনের কর্মঅভিজ্ঞতা রয়েছে তার। তবে যমুনা লাইফে চাকরিকালীন অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এডি.এমডি) পদ শূন্য থাকায় চিফ মার্কেটিং অফিসার পদকে মুখ্য নির্বাহীর অব্যবহিত পরের পদ ধরা হয়। এক্ষেত্রে কামরুল হাসানের মুখ্য নির্বাহী পদে অভিজ্ঞতা ৭ মাস ২৫ দিন। অর্থাৎ সাকুল্যে মুখ্য নির্বাহীর অব্যবহিত নিম্ন পদে কামরুল হাসানের কর্মঅভিজ্ঞতা এক বছর ৫ মাস ১৭ দিন।

এসব বিষয়ে জানতে তাকে ফোন করা হলে পূর্ব প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনের রেশ ধরে এই প্রতিবেদকের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তাছাড়া তার বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগের বিষয়ে বলেন, ‘মেঘনা লাইফ থেকে আমি যে টাকাটা নিয়েছি সেটা কোনো শ্রেণিভুক্ত ঋণ না হওয়ায় ঋণখেলাপি বলা যাবে না।’ তবে মামলার বিষয়ে জানান, ‘অ্যাগ্রিমেন্টের বাইরে আমার কাছে মেঘনা লাইফ ইন্টারেস্টের টাকা চেয়েছে, আমি দেইনি বলে মামলা করেছে।’

অন্যদিকে শিক্ষাগত যোগ্যতার শর্তপূরণ বিষয়ে বলেন, গ্র্যাজুয়েশন লেভেল থেকে ন্যূনতম চার বছরের লেখাপড়া থাকতে হবে। এখানে মূলত শিক্ষাকালের প্রতি জোর দেয়া হয়েছে। যে সময়ে আমি ডিগ্রি করেছি সে সময়ে ডিগ্রি দুই বছরের ছিল। আমার মাস্টার্স বা পোস্ট গ্র্যাজুয়েশন বর্তমানে ক্রেডিট সিস্টেমে হয়। বছরভিত্তিক নয়। সে হিসাবে আমার ১৫০ ক্রেডিট থাকায় আমার গ্র্যাজুয়েশন ও পোস্ট গ্র্যাজুয়েশনের শিক্ষাগত যোগ্যতার সময়কাল চার বছরের বেশি রয়েছে।

নির্ধারিত সময় অতিক্রান্তের পরও কোম্পানিতে পূর্ণাঙ্গ সিইও নিয়োগ না হওয়ার বিষয়ে বলেন, চলতি দায়িত্বের প্রথম তিন মাস অতিক্রম হওয়ার পর পরবর্তী তিন মাসের জন্য আইডিআরএ’র সাথে এ বিষয়ে কথা হয়েছে ও চিঠিপত্র আদান-প্রদান হয়েছে। আমরা আমাদের প্রসিডিউর মেইনটেইন করেছি। করোনার সময়কালে হার্ডকপি নিতো না, এমনকি অফিসেও কাউকে ঢুকতে দিতো না। মেইল করা হয়েছে।

তিনি সিইও হচ্ছেন কিনা এমনটা জানতে চাইলে বলেন, ইন্ডাস্ট্রিতে কোনো এমডির কি কোয়ালিফিকেশন আছে এটা তো জানি। আইডিআরএ আমাদের ৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় দিয়ে এই সময়ের মধ্যে একজন স্থায়ী সিইও’র ফাইল পাঠাতে নির্দেশনা দিয়েছে। এখন বোর্ড আমাকে পারমানেন্ট করতে চায়। আইডিআরএ অনুমোদন দিলে দিবে না দিলে নাই। আমার কোম্পানি আরেক জনকে বসাবে।

Facebook Comments Box
top-1
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});

Posted ৪:৪১ অপরাহ্ণ | সোমবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২০

bankbimaarthonity.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

আর্কাইভ ক্যালেন্ডার

Sat Sun Mon Tue Wed Thu Fri
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
30  
প্রধান সম্পাদক: মোহাম্মাদ মুনীরুজ্জামান
প্রকাশক : সায়মুন নাহার জিদনী
নিউজরুম:

মোবাইল: ০১৭১৫-০৭৬৫৯০, ০১৮৪২-০১২১৫১

ফোন: ০২-৮৩০০৭৭৩-৫, ই-মেইল: bankbima1@gmail.com

সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: পিএইচপি টাওয়ার, ১০৭/২, কাকরাইল, ঢাকা-১০০০।